খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র চলমান অচলাবস্থা কিছুতেই কাটছে না। সংকট ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। টানা তিন মাস ধরে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অচলাবস্থার কারণে ১৯ ব্যাচের এক হাজার শিক্ষার্থীর পরিবার আটকে আছে। গত ৪ মে থেকে শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ১৮ মে থেকে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান এ অচলাবস্থার ভিতর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী সোমবার (১৯ মে) সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়।
১৮ এবং ১৯ মে কুয়েট ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে জড়িতসহ লাঞ্ছিত করার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার দাবিতে শিক্ষকরা চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
দাবি আদায়ে শিক্ষকরা সোমবার (১৯ মে) দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি পালন শেষে শিক্ষক সমিতির সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ সাহিদুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি প্লাস শিক্ষকরা ফিজিকাল এবং সাইবার বুলিং প্লাস ফিজিক্যাল এসার্টের শিকার হয়েছেন। তার জন্য আমাদের কর্মসূচি চলছে। আজ আমাদের কর্মসূচির নবম দিন। গত ৪ মে থেকে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে আছি এবং গতকাল থেকে সকল প্রকার প্রশাসনিক কাছ থেকে বিরত আছি। আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। আজ বেলা ১২ টা পর্যন্ত আমরা ভিসি স্যারকে সময় দিয়েছিলাম বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা ও ডিসিপ্লিনারী কমিটির মিটিং করার জন্য। যেহেতু হয় নি, সেহেতু আমরা কালকে কর্মসূচিটা দিয়েছি।
তিনি বলেন, গতকাল থেকে আমাদের ক্লাস করার কথা ছিল। ১৪ মে ভিসি স্যার আমাদের বলেছিলেন, ১৫ মে বিকাল পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া আছে। এরপর তিনি ডিসিপ্লিনারী কমিটির মিটিং করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন এবং আমাদের শিক্ষকদেরকে জানাবেন। আমরা শিক্ষকরা ভিসি স্যারকে আশ্বস্ত করেছিলাম আপনি যদি এটা করতে পারেন তাহলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব। সে সময় অতিবাহিত হলেও তিনি ডিসিপ্লিনারী কমিটির মিটিং করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। যেহেতু কালকে পর্যন্ত সেটা হয়নি, সেহেতু আমরা নতুন কর্মসূচি দিয়েছি।
অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ ফারুক হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম মনে হয় জিম্মি হয়ে আছে। এই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এবং একটা সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে ক্লাসে ফেরার জন্য শিক্ষকরা সবাই উদগ্রীব এবং ছাত্ররাও এই বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে, সহযোগীতা করছে যে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি এরকম কর্মসূচি দেওয়ার পরও, ৭ কর্মদিবস সময় বেঁধে দেওয়া ছিল, তারপর অষ্টম কর্মদিবসে এসে আজকে ১২ টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল অথচ অদ্যাবধি আমরা কোন ব্যবস্থা নেওয়া দেখিনি। প্রশাসনকে আমরা এখানে নিশ্চুপ থাকতে দেখছি। যে কারণে আজকের এই সংকটময় অবস্থা। গতকালকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষকরা আজ ভাইস চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেভাবে যাওয়া দরকার, যেটার প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, সেটা না হলে একটা প্রতিষ্ঠান কখনই সুন্দরভাবে চলতে পারে না। আমরা শুধু সেটাকে পূরণ করতে বলেছি কার্যকর করতে বলেছি”।
শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা সবাই আমাদের শিক্ষকদের উপর আস্থাশীল। তাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, সেটার প্রতি আমরা আস্থাশীল আমরা চাই বিচার প্রক্রিয়াটি দ্রুততম সময়ে শুরু হোক। আমাদের অনেক ডিপার্টমেন্টে দুইটা পরীক্ষা হয়ে আটকে গেছে। অনেক ডিপার্টমেন্টের একটা সেমিস্টারের মাত্র হয়তো কিছু পরীক্ষা বাকি। অল্প কিছু পরীক্ষার জন্য আজকে আমাদের ১৯ ব্যাচের এক হাজার শিক্ষার্থীর পরিবার আটকে আছে। আমরা শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি সমস্যা সমাধান করে যেন আমাদের দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হোক। আমরা চাই কোন শিক্ষার্থী যেন অবিচারের শিকার না হয়। এট দ্যা সেম টাইম আমরা এটাও বলতে চাই আমরা শিক্ষকদের সাথে পূর্ণভাবে আস্থাশীল। নতুন করে যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির গঠন করার আহ্বান জানানো হয়েছে এটার পক্ষে আমরা নয়। কারণ অলরেডি ১৯ ব্যাচ ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমরা অচলাবস্থায় আছি। এখন যদি পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করায় সেটি একটা দীর্ঘসুত্রিতা তৈরী করবে। আমরা চাই না ফারদার কোন দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হোক।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থার মধ্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী সোমবার (১৯ মে) বেলা ১১ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। ভারপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমি যখন জানতে পারি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, উনি ক্যাম্পাস লিভ করবেন। আমি তখন ওনাকে রিং করলাম, উনি বললেন আমি তো এখন রুপসা ঘাট, খুলনা পার হয়ে গেছি। আমি বললাম স্যার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তো কর্মসূচিতে আছি, দায়িত্ব নিতে পারব না। উনি তখন বললেন, দায়িত্বে তো আমি আছি। আমি লিভ করলে একজন টিচারকে দায়িত্ব দিতে হয়। আপনি আপনার মত কর্মসূচি পালন করেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কবে ফিরবেন? বললেন, আগামীকাল ফিরব।
খুলনা গেজেট/ এমএনএস